রবিবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০১৮

গল্পঃ পাবনার পাগলি / পর্বঃ ১৫

গল্পঃ #পাবনার_পাগলি
পর্বঃ ১৫ (শেষ পর্ব)
.
লিখাঃ অর্দ্র
.
সব কিছুই ঠিক ঠাক চলছে । নির্দিষ্ট সময় পর আমাদের ঘর আলো করে একটি পুত্র সন্তান জন্ম নিলো ।
আমি অনেক হ্যাপি যা বলে বোঝাতে পারবো না । অর্দ্রীও অনেক খুশি । মোট কথা সবাই এই সংবাদ শুনে অনেক খুশি ।
.
-তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ
-কেন
-আমাকে এতবড় একটা গিফট দেয়ার জন্য
-তোমাকেও এত্তগুলা থ্যাংকু
-কেন
-আমাকে একটা খেলার সাথী দেয়ার জন্য
ড্রয়িংরুমে সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছে । আমি আর অর্দ্রীও ওখানে গেলাম ।
-তো কি নিয়ে আলোচনা চলছে
-কি আবার, আমার নাতির নাম কি রাখবো সেটা নিয়ে
-আরেহ সেটা তো ঠিক করাই আছে (অর্দ্রী)
-ওমা তাই নাকি
-হুম
-তো কে ঠিক করলো
-আমি আর অর্দ্র
-কি নাম
-হিমু
-অনেক সুন্দর বাট কখন ঠিক করলে নামটা.??
.
অর্দ্রী সব বলে দিতে চাইছিলো । আমি ওর মূখ চেপে ধরে সাইডে নিয়ে এলাম ।
-আরেহ তুমি তো দেখছি
রেলগারির মত গড়গড় করে সব বলে দিবে
-বললে কি হবে
-বললে কি হবে মানে, আমরা ৫ বছর আগে এই নাম ঠিক করে রেখেছি, এটা বললে সবাই কি ভাববে
-ও তাইতো, এটা তো ভেবে দেখিনি
-হু ভাবা উচিত ছিলো
-হু
-ভুলেও কাঊকে এই কথা বলবা না
-আচ্ছা
.
.

আমাদের কথপোকথন টা মেঘা শুনতে পেলো । সাথে সাথেই হো হো করে হেসে উঠলো । আমি ইশারাতে মানা করার অনেক চেষ্টা করলাম বাট ও হাসতে হাসতে গিয়ে সবাইকে বলে দিলো । এটা শুনে সবাই সশব্দে হেসে উঠলো । আমি তো অনেক লজ্জা পেয়ে গেলাম । তাই আর সেখানে না গিয়ে রুমে চলে গেলাম ।
.
আমি রুমে এসেছি দেখে তারা সবাই আমার রুমে আসলো । ওই এক কথা নিয়ে হাসা হাসি করতে লাগল ।
তাদের হাসির তিক্ষ্ণ আওয়াজ টা সহ্য করতে পারছিলাম না । হাসতে মানা করলাম । বাট কে শুনে কার কথা । আমি আর সহ্য করতে পারছিলাম না । আমার মাথার মধ্যে অনেক ব্যথা করছে । অসহ্যনীয় যন্ত্রণা হচ্ছে । সহ্য করতে না পেরে নিচে পড়ে গেলাম । সাথে সাথেই সেন্সলেস ।
সবাই ধরাধরি করে জ্ঞান ফেরানোর অনেক চেষ্টা করলো । বাট পারল না । অবশেষে হাসপাতালে নেওয়া হল আমাকে ।
মাঝেমাঝেই আমার মাথাতে প্রচন্ড ব্যথা হয় । ওষুধ খেলে ঠিক হয়ে যায় । কিন্তু আজকে একদম সহ্য করতে পারিনি ।
.
জ্ঞান ফিরতেই দেখি সবাই অনেক কান্নাকাটি করছে
.
-আরে তোমরা কাদছো কেন
কেউ কিছু বলছে না শুধু কেদেই যাচ্ছে
কিছু না বলেই সবাই চলে গেলো । অর্দ্রী পাশে বসে কেদেই যাচ্ছে ।

-আরে আমার তো কিছু হয়নি কাদছো কেন
-তোমাকে ছাড়া আমি বাচবো প্লিজ আমাকে একা ছেড়ে কোথাও যেওনা
-আরে পাগলি তোমাকে ছেড়ে কোথায় যাবো
-জানি,আমাকে ছেড়ে দুরে চলে যাবে, তখন দেখে নিও আমিও আর থাকবো না
-কি সব উল্টপাল্টা বলছো
-কিছু না
বলেই কাদতে কাদতে চলে গেল ।
আজিব তো.! কেউ কিছু বলছেনা । সবাই শুধু কেদেই যাচ্ছে । আর কি সব উল্টপাল্টা কথা বলছে । নিজের প্রতি কেমন জানি সন্দেহ হতে লাগল । আমি নার্সকে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে আমার । উনি যা বললেন তা শুনে মনে হল আমি বিদ্যুতের শক খেলাম । আমার নাকি ব্রেইন টিউমার অনেক আগে থেকেই । এখন নাকি আমি জিবনের শেষ স্টেপ অতিক্রম করছি ।
আমি এই কথা বিশ্বাস করতে পারছিনা । এটা কিভাবে হলো ।
একটুপর পরিবারের সবাই এলো ।
-বিদেশ থেকে নাকি ভালো ডাক্তার আসবে, আমরা চাচ্ছি তোর অপারেশন টা করাতে (বাবা)
-না বাবা, এখন আর অপারেশন করিয়ে কোনো লাভ নেই
-অনেক ভালো ডাক্তার প্লিজ না করিসনা বাবা
-কিন্তু আমি যতদিন বাচবো এভাবেই বাচতে চাই
-কিন্তু আমরা তোকে হারাতে চাইনা ।
-আচ্ছা তোমরা যা ভালো বুঝো তাই করো
তারপর বাবা অপারেশনে সব ব্যবস্থা করে ফেললেন ।
-
অনেক দ্রুত সবকিছুর ব্যবস্থা হয়ে গেলো । যত তারাতারি সম্ভব অপারেশন টা করানো হবে ।
দেখতে দেখতে দিনগুলো পার হয়ে গেল । আজ আমার অপারেশন করানো হবে । জানিনা বেচে থাকবো নাকি মরে যাবো ।
অপারেশন এর আগে সবাইকে দেখতে চাইছিলাম । হিমু কোলে নিয়ে অনেক আদর করলাম । বাবা মা ভাই সবাই গুড লাক বলে বাহিরে গেলো । অর্দ্রী শুধু কেদেই যাচ্ছে ।
-এই পাগলি কাদছো কেন
-আমার মন কেমন করছে, নিজেকে শান্ত রাখতে পারছিনা
-আরে কিচ্ছু হবেনা
-আমাকে ছেড়ে যেওয়া প্লিজ । আমি তোমাকে ছাড়া বাচবো না
-কোথাও যাবো না আমি ফিরে আসবোই
অর্দ্রী আমাকে ছেড়ে যেতে চাইছিলো না তবুও সবাই ওকে বাহিরে নিয়ে গেল ।
.
অর্দ্র কে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হলো । শুরু হলো অপারেশন । জানিনা পরিণতি টা কি হবে ।
বাহির সবাই আল্লাহর নাম করছে আর কেদেই যাচ্ছে । আল্লাহ কি এত গুলা মানুষের কান্নার আওয়াজ শুনছে না ।
অনেক্ষণ পর ডক্টর কে বাহিরে আসতে দেখা গেলো ।
অভ্র ডাক্তার কে জিজ্ঞেস করলো । কিন্তু ডাক্তার মুখ কালো করে জানালো । অপারেশন টেবিলেই অর্দ্রের মৃত্যু হয়েছে । সবাই বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে । কেউ কিছু বলতে পারছে না । সবাই কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো ।
অর্দ্রী কে কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না ।
আল্লাহ কেন এটা করল । কি ছিল তাদের অপরাধ ।
কিন্তু এটা তো মানতেই হবে যে যাবার সেতো যাবেই । নির্দিষ্ট সময়ে অর্দ্রের দাফন কাফন সম্পুর্ন করা হলো । সবাই তাকে হারিয়ে শোকাহত ।
.
আজ তিন দিন হলো অর্দ্রী কিছুই খায়নি । রুমের মধ্যে থাকে আর কি যেন বলে । এক সময় পাগলের মতো আচরন শুরু করে ।
.
অর্দ্রকে হারানোর শোকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে অর্দ্রী । প্রথমে অভ্র কে একদম সহ্য করতে পারেনা । আস্তে আস্তে সেটা সবার ক্ষেত্রে একই । সব সময় উদ্ভট আচরন করত থাকে । একসময় তাকে বাড়িতে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে । তাই তাকে চিকিৎসার জন্য পাগলাগারদে পাঠানো হয় ।
.
আল্লাহর কি নির্মম পরিহাস । অনেক ভালোবেসে অর্দ্র, অর্দ্রীর নাম দিয়েছিলো পাবনার পাগলি । সত্যিই সে আজ পাবনার পাগলি । আজ সেই অর্দ্রীর স্থান সত্যিই পাবনার পাগলারদে ।
আর হিমু এখন অভ্র আর মেঘার ঘরে বড় হচ্ছে । তাদেরকেই সে বাবা মা হিসেবে জানে ।
.
বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ।
.
*******সমাপ্ত******
.
#অর্দ্র

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

3 Single Idiots

গল্পঃ #3_Singe_Idiots Part: 02 . লিখাঃ অর্দ্র . -তোদের দুইটারে কতবার বলেছি যে এইবার অন্তত ঝামেলা করিস না(অর্দ্র) -........ -কাজটা কে...