গল্পঃ #3_Singe_Idiots
Part: 02
.
লিখাঃ
অর্দ্র
.
-তোদের দুইটারে কতবার বলেছি যে এইবার অন্তত ঝামেলা করিস না(অর্দ্র)
-........
-কাজটা কে করছে
-নীল(রাজ)
-আ আমার কি দোষ, আ আমি কি ক ক করছি(নীল)
-নাহ, আপনার কিচ্ছু করেননি, সব আমি করছি সব দোস আমার(অর্দ্র)
-আমি কি এ এ একা করছি না নাকি, রা রা রাজও তো বা বা বাড়িওয়ালার মেয়ের সাথে টা টা টাংকি মারছে, পার্থক্য শুধু এটা যে আমি ধ ধ ধরা খেয়েছি আর চা চা চা চালাকটা ধরা খা খা খায়নি(নীল)
-তোদের আমি কতবার বলেছি, অনেক কষ্টে এই বাসা পেয়েছি আল্লাহর ওয়াস্তে কিছু করিসনা(অর্দ্র)
-স স স সব দোষ কি আমার নাকি আ আ আগের বার যে বা বাসা ছাড়া হয়েছিলাম তো তো তোর জন্যই তো, তু তু তুই তো বা বাড়িওয়ালার মেয়ের সাথে টাংকি মা মা মারছিলি(নীল)
-এঁহেম এঁহেম, থাক সেসব কথা এখন চল নতুন বাসা খুজতে হবে (অর্দ্র)
-আমি পা পা পারবোনা, তোরা যা (নীল)
-এখন তো কাজের সময়, এখন পারবিই না (অর্দ্র)
-হু তো তো রা যা (নীল)
-কেন পারবিনা
-ত ত তখন আমারে অ অ অনেক মারছিস গা ব্য ব্য ব্যথা করতেছে (নীল)
-শালারে ধরতো আরো কিছু মার দেই(অর্দ্র)
.
দিছি শালারে আরো কয়েকডজন মার ।
যাইহোক মাসের আর কয়েকদিন বাকি আছে, এরমধ্যে নতুন বাসা খুজতে হবে ।
বাসা খুজতে বেরিয়ে পড়লাম । বাট ব্যাচেলর দের কেউ বাড়িভাড়া দিচ্ছে না । অনেক চেষ্টা করেও একটা বাসা পেলাম না । অবশেষে একটা বুদ্ধি পেলাম । নীলকে বানালাম বোবা, আমি ল্যাংরা, আর রাজ কানা মানে অন্ধ ।
গেলাম নতুন একটা বাসাতে । কলিংবেল বাজাতেই একটা বয়স্ক মহিলা দরজা খুলে দিলো ।
-তোমরা কারা, কি চাও
কিছু না বলেই সবাই কান্না শুরু করে দিলাম ।
এই ছেলে তোমরা কাদছো কেন
-আমার মা ছিল, অনেক ভালোবাসতো, আমাকে ছেড়ে চলে গেল-অর্দ্র)
বলে আবার কান্না শুরু করে দিলাম ।
-এই অ্যান্টি মারা গেছে আমাদের বলিস নি তো(রাজ)
এই শালা দেখছি সব শেষ করবে । এখন কি বলব ।
-আমি আমার নিজের মায়ের কথা বলছি সৎমা না (অর্দ্র)
-আচ্ছা দাড়াও, তোমরা তো সাহায্য নিতে এসেছো, দেখি কতটুকু পারি
-না অ্যান্টি আমরা সাহায্য চাইনা, আমাদের একটা বাসা ভাড়া দিন আন্টি
-কিন্তু বাবা, আমি তো ব্যাচেলর ভাড়া দেইনা ।
-জানি অ্যান্টি আপনারা ব্যাচেলর ভাড়া দেন না, কিন্তু দেখেন আমরা তো আপনাদের মতো স্বাভাবিক মানুষ না, ও দেখেন জন্ম থেকেই অন্ধ, আমার পা দেখেন ঠিক মত হাটতে পারিনা, আর এ তো কথাই বলতে পারেনা (অর্দ্র)
-সরি, আমি না আসলে বুঝতে পারিনি
-আন্টি আপনি আমার মায়ের মত আপনাকে দেখে আমার মায়ের কথা মনে পড়ছে (রাজ)
-এই ছেলে তুমি নাকি চোখে দেখোনা, তাহলে কিভাবে বুঝলে আমি তোমার মায়ের বয়সী
-আন্টি আল্লাহ ওর চোখের দৃষ্টি দেননি ঠিকি বাট ওর মনের দৃষ্টি খুব প্রখর (অর্দ্র)
-ওহ,
-আন্টি আমরা জানি আপনার মেয়ে আছে, আমরা আপনার মেয়েকে মেয়ের দৃষ্টিতে দেখবো, এই থুক্কু
-
-না আন্টি, আপনার মেয়েকে আমরা বোনের দৃষ্টিতে দেখবো (রাজ)
-তুমি না চোখে দেখোনা, তাহলে বোনের দৃষ্টিতে দেখবে কিভাবে
-বোনের না আন্টি মনের দৃষ্টিতে (নীল)
-এই ছেলে তুমি না বোবা, তাহলে কথা বললে কিভাবে
-ও বলেনি আন্টি, আমি বলেছি (অর্দ্র)
-ওহ তাইতো বলি বোবা আবার কথা বলে কিভাবে
-আমাদের একটা বাসা ভাড়া দেন প্লিজ আন্টি
-আচ্ছা ঠিক আছে, তোমরা তাহলে উঠে পড়ো
-আর আন্টি, আমরা যে প্রতিবন্ধী এই কথা কাউকে বলবেন না
-কেন
-আমরা কারো করুনার পাত্র হতে চাইনা
-ও আচ্ছা ঠিক আছে
.
অনেক কস্টে বাসা টা মেনেজ করলাম ।
-
দেখ তোদের শেষবারের মতো বলতেছি, আর ঝামেলা করিস না বাপ
-কিসের ঝামেলা, কোনো ঝামেলা নাই (রাজ)
.
নতুন বাসাতে উঠে গেলাম । এখন একটু ঘুমানো দরকার । ঘুমিয়ে পড়লাম সবাই । ঘুমটা ভাঙলো কলিংবেলের আওয়াজ শুনে । রাজকে একটা লাথি দিয়া কইলাম, "যা দরজা খোল" । রাজ নীলরে একটা লাথি দিয়া তারে খুলতে বললো । নীল লাথি দেয়ার মতো কাউকে না পেয়ে বাধ্য হয়ে নিজেই দরজা খুলতে গেল । দরজা খুলতে খুলতে...
-এত স স সকালে কে ঘুমের বা বা বারোটা বাজাতে আসলো(নীল)
-এই ছেলে তুমি না বোবা, কথা বললে কিভাবে
-ব্য ব্য ব্য
-আমি নিজে শুনলাম কথা বললে
-ও বলেনি আন্টি, আমি বলেছি (অর্দ্র)
-তুমি বলেছো.? আমি ভাবলাম ও বলেছে
-আরে না আন্টি ও কিভাবে বলবে তো বোবা
-ব্য ব্য ব্য ব্য
-আন্টি আপনার ধারণা ভুল করার জন্য এখানে এলাম । এখানে আমি ছাড়া কেউ সত্যি বলেনা, এখানে আমি একমাত্র সত্যবাদী (রাজ)
-কি বলে এসব
-আন্টি ওর কথাই কান দিবেন না, ঘুম থেকে উঠে এসেছে তো তাই উল্টাপাল্টা বকতেছে
-ও, না নতুন এসেছো তাই খোজখবর নিতে এলাম ।
-ও তাহলে ভিতরে আসুন
-না তোমরা থাকো
বলে আন্টি চলে গেলো । উফফফফ হাফ ছেড়ে বাচলাম ।
-ওঈ শালা দেখে দরজা খুলবিনা.? আরেকটু হলেই তো ধরা খেতাম ।
--আ আমি কেমনে জানমু যে আন্টি আ আ আসবে.?
-থাক যা হবার হয়েছে
.
বিকালে নীল ছাদে বসে সংগীত চর্চা করছিল । এমন সময় একটা মেয়ের আগমন..
-আ আ আপনি কে.? এ এ এখানে কি কি কি করছেন.?
-ওইই, আ আ আপনি আমাকে ভ্যা ভ্যা ভ্যাঙ্গাচ্ছেন কেন.?
-আ আ আমি আ আ আপনাকে ভ্যাঙ্গাতে যাব কেন, আ আ আমর কি ঠে ঠে ঠে ঠে ঠে....
-ঠেকা.?
-হুম, ওটাই
-ওহ, তারমানে আপনিও আ আ আমার মতো
-হ্যা, আ আ আমিও আ আ আপনার...বাই দ্যা ওয়ে আ আ আপনি কে
-আমি নি নি নীল, নিচের ফ্র্যাটে ভাড়ায় এ এ এসেছি, আপনি কে.?
-আমি.? আপ আপ আপনি যেখানে দাড়িয়ে আছেন না.? সেই বা বা বাড়ির মালিকের মেয়ে । মেজো মেয়ে শৈমী ।
-ওহ
-এ এ একটা কথা জি জি জিজ্ঞেস করি.?
-না
-না করি
-আচ্ছা ক ক করেন
-আপনি কি সব সময় এ এ এভাবেই কথা ব ব বলেন নাকি আ আ আমার মতো স স সুন্দরী মেয়ে দেখলে এ এ ভাবে বলেন.?
-ও ও ওই, এটা আ আমার জ জ জন্মগত সমস্যা ।
-আচ্ছা গান গাচ্ছিলেন গান, আমি একটু শুনি
-আচ্ছা
.
সন্ধার পর রুমে আড্ডা দিচ্ছিলাম সবাই ।
-দোস্ত আমি তো পইড়া গেছি (রাজ)
-তো দেখেশুনে হাটবিনা.?(অর্দ্র)
-দুর শালা আমিতো প্রেমে পড়ে গেছি (রাজ)
-কি কস
-বিশ্বাস কর মামা, আমার দিকে এমন ভাবে তাকায়া আছিল, দিপিকা,ক্যাটরিনা সব ফেল ।
--হ, প্রতিবন্ধী দেখলে মানুষ এভাবেই তাকায় (অর্দ্র)
-ধেত, তুই সবসময় নেগেটিভ টা ভাবস
-যাইহোক, আমিও তো পড়ে গেছি মামা, তোদের ভাই, তোদের ভাইতো প্রেমে পড়ে গেছে রে (অর্দ্র)
-কস কি মামা
-হ
-এ এ এটা কেমনে স স সম্ভব(নীল)
-তোর আবার কি হলো
-আমিও তো প প পড়ে গেছি
-তোর সাথে আবার কে প্রেম করবে, তুইতো ঠিক করে কথা বলতেই পারিসনা (রাজ)
-তু তুই কি আ আ আমাকে ইনসাল্ট ক ক করার ট্রাই করছিস.?
-আরেহ না, ও ট্রাই করছেনা, ও তোকে ইনসাল্ট করেছে (অর্দ্র)
-আমরা তিনজন বাড়িওয়ালার তিন মেয়ের প্রেমে পড়ে গেছি.? তার মানে...
-তার মানে কি আমরা বাড়ির মালিক হতে চলেছি (অর্দ্র)
.
আড্ডা শেষে ঘুমি পড়লাম । পরদিন কলেজ গেলাম । এবং সন্ধায় আবারো আড্ডা...
-ওই গিটার দে
বলে নিলের হাত থেকে গিটার নিয়ে বাজাতে লাগলাম ।
-বাজাতে পা পা পারেনা অ অ অথচ গিটার হাতে কেন যে নেয় কি কি কিছুই বুঝিনা
-মনে সূখ থাকলে মামা, মনে সূখ থাকলে (অর্দ্র)
-ওই তোর মনে আবার কিসের সূখ
-আমি তো নাম্বার পেয়ে গেছি
-কার
-তোর কাকির নাম্বর
-ও ও ওর কাকির না নাম্বার দি দিয়ে তুই কি করবি
-আব্বে হালা আমি ওর কাকু ওর কাকির নাম্বার পাইছি
-ও আগে ব ব বলবি তো.
-হ
-আ আ আমিও তো ফেসবুক আ আ আইডি পাইয়া গে গেছি
--কি কস মামা সত্যি.?
-হ
-কিন্তু আমিতো কিছুই পেলাম না(রাজ)
-ছাগল, না পাঠা । পাঠা দিয়ে কখনো হালচাষ হয়না(অর্দ্র)
-তো তুই ক্যামনে পটাইলি(রাজ)
-সেদিন রিক্সা নিয়ে তোর জন্য অয়েট করতেছিলাম । তখন ওই মেয়েটা আসলো । আমি আমার রিক্সা তাকে দিয়ে দিলাম । তারপর আমাকে তার সাথে যেতে বলল । আমি প্রথমে না বললাম । বাট পরে ওর সাথেই গেলাম । তারপর নাম্বার নিলাম (অর্দ্র)
-শালা তুই মাইয়ারে পাইয়া আমারে ভুলে গেলি (রাজ)
-আরে তুই গেলে তো তোরে পাবো বাট মাইয়া গেলে কি মাইয়া পাবো.?
.
পরদিন কলেজ যাবো । রাজ রিক্সা নিয়ে নিচে অয়েট করতেছে । গিয়ে দেখি রিক্সা নাই..
-রিক্সা কই
-দোস্ত তোর মতো ট্রাই করতেছিলাম কিন্তু হলোনা
-মানে কি, মাইয়া রিক্সা নিয়া চলে গেছে.?
-হুম
-তোর রেখে চলে গেছে.?
-হ
-কিচ্ছু বলেনাই.?
-না
-থ্যাংক ইউ.?
-ওয়েলকাম
-ধেত শালা, থ্যাংকুও বলেনাই.?
-না
-আমি কিছু জানিনা, দুই মিনিটের মধ্য রিক্সা নিয়া আসবি, কই থেকে আনবি জানিনা
-দোস্ত চলনা তুইও
-পারুম না
-প্লিজ চল
-আচ্ছা ।
.
শালা এইবার ফেল মারলেও পরের বার ঠিকি পাস করছে । মানে এখন আমার তিনজন তিনটারে লাইন মারতেছি । সেদিন বিকালে সবাই ছাদে যে যার টারে নিয়া গল্প করতেছি । এমন সময়..
--বাহ, এমন দৃশ্য দেখা ও কি আমার ভাগ্য ছিল.?
সবাই থতমত খেয়ে গেলাম । তাকিয়ে দেখি বাড়িওয়ালী ।
-কানা কি করছে.? কানা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, আর বোবা.? সে তো কবিতা বলতেছে । আর লেংরা রিতিমতো ড্যান্স করতেছে (বাড়িওয়ালী)
-......
-তোমরা তিনজন এখুনি নিচে আমার সাথে দেখা করো
.
অবশেসে আবারো বাড়িহারা হলাম । আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দিল । বাড়িটাও হারালাম আবার গার্লফ্রেন্ড টাও হারালাম ।
.
যাইহোক, রাস্তায় তো আর থাকা যায়না, তাই নতুন বাসা খুজতে হবে । বের হলাম নতুন বাসা ভাড়ার খোজে....
.
----------সমাপ্ত-----------
নীল ঘুড়ি
রূপকথার রাজকুমার
.
উৎসঃ নাটক
.
[বিঃদ্রঃ দেখে ভালো লাগলো তাই লিখলাম । কেউ কিছু মনে করবেন না প্লিজ । ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন